সংবাদ উপস্থাপনে গণমাধ্যমের রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব

 সংবাদ উপস্থাপনে গণমাধ্যমের রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব

গত রোববার (১০ নভেম্বর) আওয়ামীলীগ কার্যালয়ের সামনে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছিলেন বিপুল পরিমাণ বিক্ষোভকারী। বিক্ষোভের জটলার ভিতর এসে একজন প্রবীণ ব্যক্তি বলে ওঠেন, “আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা, শেখ হাসিনা দ্রুত সময়ের মধ্যে দেশে চলে আসবেন।” এরপর “জয়বাংলা” বলে স্লোগান দেন তিনি। এরপরই উপস্থিত বিক্ষোভকারীদের হাতে মারধরের শিকার হন তিনি। পরে তাকে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে এবং  একটি হত্যা মামলার আসামী করা হয়।

মারধরের শিকার উক্ত ব্যাক্তি সিরাজগঞ্জ আওয়ামীলীগের দীর্ঘদিনের সহ-সভাপতি, সিরাজগঞ্জ জেলা জজ আদালতের সাবেক পাবলিক প্রসিকিউটর জনাব আব্দুর রহমান। তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা। সিরাজগঞ্জ-৫ সংসদীয় আসন ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন তিনি।

শেখ হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার পর গত ১০ নভেম্বর প্রথমবারের মত গুলিস্তানের জিরো পয়েন্টে সমাবেশের ডাক দেয় আওয়ামীলীগ। ফাঁস হওয়া এক ফোনালাপে শেখ হাসিনাকে বলতে শোনা যায় ট্রাম্পের ছবি পোস্টার বানিয়ে যেন নেতাকর্মীরা সমাবেশে যোগ দেন। যাতে করে তাদেরকে কোন বাধা দিলে সেটি ট্রাম্পের ছবির উপর আক্রমণ হিসেবে উপস্থাপন করা যায়। ফোনালাপটি আসল বলে স্বাধীনভাবে যাচাই করে জানিয়েছে দ্য প্রিন্ট। আওয়ামীলীগ আহুত সেই সমাবেশে যোগ দিতেই আওয়ামীলীগ কার্যালয়ের সামনে যান জনাব আব্দুর রহমান এবং শেখ হাসিনার পক্ষে “জয় বাংলা” বলে স্লোগান দেন। যেটি আওয়ামীলীগ দলীয়ভাবে ব্যবহার করে থাকে।

কিন্তু আব্দুর রহমানকে মারধর, আটক ও মামলার খবর কয়েকটি গণমাধ্যম এমনভাবে পরিবেশন করেছে যেন মুক্তিযোদ্ধা হওয়া ও ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেয়ার কারণেই তাকে এসবের শিকার হতে হলো। যেমন বিডিনিউজ টোয়োন্টিফোর তাদের এ সংক্রান্ত খবরের শিরোনাম দিয়েছে- “‘জয় বাংলা’ স্লোগান: পিটুনির শিকার সেই মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা মামলায় গ্রপ্তার”। বিডিনিউজ তাদের খবরের কোথায়ও উল্লেখ করেনি যে আব্দুর রহমান একজন আওয়ামীলীগ নেতা এবং আওয়ামীলীগ আহুত সমাবেশে যোগ দিতে আওয়ামীলীগ কার্যালয়ের সামনে গিয়েছেন। বরং তাকে একজন মুক্তিযোদ্ধা ও সিরাজগঞ্জ জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। যদিও অন্যান্য সংবাদমাধ্যম তাকে সাবেক প্রধান কৌঁসুলি বলছে।

বাংলা ট্রিবিউন তাদের খবরে শিরোনাম দিয়েছে “‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে পিটুনির শিকার সেই মুক্তিযোদ্ধা হত্যা মামলায় কারাগারে”। সংবাদমাধ্যমটির শিরোনামেও জনাব আব্দুর  রহমানের মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় ও ‘জয় বাংলা’ স্লোগানকে প্রধান করে তোলা হয়েছে। যদিও প্রতিবেদনে তার আওয়ামীলীগের রাজনীতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। একই সাথে “শেখ হাসিনা দেশে চলে আসবেন” বলে যে তিনি ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেওয়ার সূচনা করেন সেটি উল্লেখ করা হয়েছে। বিডি নিউজের খবরে এই বিষয়টি এড়িযে যাওয়া হয়েছে। যাতে আব্দুর রহমানকে মারধর ও মামলার ঘটনায় মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধা ও জয় বাংলা স্লোগান সংশ্লিষ্ট এক বিশেষ আবেগ তৈরি হয়।

কালের কন্ঠ তাদের খবরে শিরোনাম দিয়েছে “’জয় বাংলা’ স্লোগান দেওয়া মুক্তিযোদ্ধা হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার”। এ খবরের শিরোনামেও আব্দুর রহমানের মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়কে প্রধান করা হয়েছে এবং তার সাথে  ‘জয় বাংলা’ স্লোগানকে যুক্ত করা হয়েছে। তবে প্রতিবেদনে পত্রিকাটি উল্লেখ করেছে আওয়ামীলীগের সমাবেশে যোগ দিতে আওয়ামীলীগ কার্যালয়ের সামনে গিয়ে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেন আব্দুর রহমান।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, আওয়ামীলীগ আহুত সমাবেশটি করার জন্য দলটিকে অনুমতি দেয়নি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।