গত শনিবার (৩০ নভেম্বর) ত্রিপুরা থেকে কলকাতা যাওয়ার পথে বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্বরোডে শ্যামলী পরিবহনের একটি বাসকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে দুর্ঘটনার কবলে ফেলার জন্য পণ্যবাহী একটি ট্রাক ধাক্কা দিয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে ভারতীয় গণমাধ্যমের খবরে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
আরও দাবি করা হয় যে বাসকে ধাক্কা দেওয়ার পর স্থানীয় লোকজন বাসে থাকা ভারতীয় যাত্রীদের প্রাণনাশের হুমকি দেয় এবং ভারত বিরোধী নানা স্লোগান দিতে থাকে। এমন দাবির পোস্টে সয়লাব হয়ে গেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারী ভারতীয়দের মাঝে।
সংবাদ প্রকাশ করেছে বেশ কিছু সংবাদমাধ্যম। ত্রিপুরা রাজ্যের পরিবহন মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরিও ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে করেছেন এমন দাবি। এ বিষয়ে গণমাধ্যমের সাথে কথা বলতে গিয়ে হুমকির ভাষায় কথা বলেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহা।
তবে বাংলাদেশের একাধিক গণমাধ্যম ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন ও একাধিক স্বাধীন ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে বাসটিকে একটি ট্রাক ওভারটেক করতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটে। এতে পিছনে থাকা একটি ৩ চাকা ইজিবাইক বাসের পেছনে আটকে পড়ে এবং ইজিবাইক চালক সামান্য আহত হন। এনিয়ে তর্ক বাঁধে বাসচালক ও ইজিবাইক চালকের মাঝে। উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে ধাক্কা দেয়া কিংবা যাত্রীদের হুমকি দেয়ার দাবি সম্পূর্ণভাবে মিথ্যা। বাসে থাকা ভারতীয় যাত্রীরা ভিডিও সাক্ষাতকারে জানায় বাসটি দুর্ঘটনায় পড়েছিল তবে তাদের কোন সমস্যা হয়নি।
এ ঘটনা নিয়ে রোববার (১ ডিসেম্বর) সংবাদ সম্মেলন করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পুলিশ। পুলিশ জানায় শনিবার দুপুরে শ্যামলী পরিবহনের বাসটি ভারতের আগরতলা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া হয়ে ঢাকা যাচ্ছিল। বাসটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদর উপজেলার সুহিলপুরের চান্দিয়ারা এলাকা অতিক্রম করার সময় একটি ট্রাক বাসটিকে ওভারটেক করতে গিয়ে চাপ দেয়। ঘটনার সময় বাসে ১৭ জন ভারতীয় এবং ৯ জন বাংলাদেশি যাত্রী ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাসটির চালক আসাদুল হক। তিনি বলেন, ‘একটি ট্রাক ওভারটেক করতে গেলে আমি ইমার্জেন্সি ব্রেক কষে দাঁড়িয়ে যাই। এসময় পেছনে থাকা একটি তিন চাকার কভার্ড ভ্যানে ধাক্কা লাগে। এতে ভ্যানটি বাসের পেছনে আটকে যায়। বিষয়টি হাইওয়ে থানা-পুলিশকে অবহিত করা হলে পুলিশ এসে রেকার দিয়ে ভ্যানটি সরিয়ে নেয়। দুর্ঘটনায় বাসের কোনো ক্ষতি হয়নি কিংবা যাত্রীরা আঘাতপ্রাপ্ত হননি।আমার প্যাসেঞ্জারের সাথে ওইখানে জনগণের কোন একটা কথাও হয়নি’
বাসচালক আরও বলেন, বাসে থাকা ভারতীয় যাত্রীদের সাথে স্থানীয় সাধারণ মানুষের কোনো বাক-বিতণ্ডা বা কোনোরকম ঝামেলা হয়নি। ভারতীয় গণমাধ্যমে বাসে হামলার খবর দেখে আমিও অবাক হয়েছি।”
অনলাইন নিউজ পোর্টাল ঢাকা পোস্ট এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বাস যাত্রীদের আক্রমণ বা হুমকির কোন ঘটনা ঘটেনি এবং বাসটিকে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবেও ধাক্কা দেয়া হয়নি। একইরকম দাবি করা হয়েছে বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোর ও চ্যানেল টোয়েন্টিফোর।
ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান রিউমার স্ক্যানার তাদের ফ্যাক্টচেকিং প্রতিবেদনে দেখিয়েছে বাসের যাত্রীদের হুমকি দেয়ার দাবিটি। আরেক ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান ফ্যাক্টওয়াচও জানিয়েছে এমন দাবির কোন ভিত্তি নেই।
মাধ্যমে ভারতীয় গণমাধ্যম WION News এর সহ- সম্পাদক Sidhant Sibal এর তার এক্স একাউন্টে বাসটির ভারতীয় যাত্রীদের একটি ভিডিও সাক্ষাৎকার প্রকাশ করেন। এতে ভারতীয় যাত্রীদের বলতে শোনা যায়, “গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়েছিল, তবে আমাদের কোন সমস্যা হয়নি। সবকিছু ঠিকঠাক আছে। ”
A bus traveling from Bangladesh to India, carrying Indian passengers, encountered a minor accident.
The passengers reported no harassment or significant issues and confirmed that they are all safe & unharmed: pic.twitter.com/ZMIGlsQWty
— Sidhant Sibal (@sidhant) December 1, 2024
এ ঘটনায় মিথ্যা দাবির সূত্রপাত ঘটে ত্রিপুরা রাজ্যের পরিবহন মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরীর ফেসবুক পোস্ট থেকেই। মুহুর্তে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে তার পোস্ট। আর যাচাই-বাছাই না করে সুশান্ত চৌধুরীর বরাত দিয়ে মিথ্যা খবরটি প্রচার করে রিপাবলিক বাংলা, এবিপি আনন্দ, দ্য স্টেটসম্যান, হিন্দুস্তান টাইমসএই সময়, নিউজ এইটিন, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, জাগরণ ত্রিপুরাসহ আরও বেশ কিছু সংবাদমাধ্যম।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা এ ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, ‘এরকম ঘটনা ঘটতে পারে তা ভাবা যায়নি। বাংলাদেশে যা চলছে তা কোনও মতেই মেনে নেওয়া যায় না। ওরা যদি নিজেদের শুধরে না নেয়, তাহলে ফল ভুগতে হবে। ওখানে যা হচ্ছে তা মোটেও ভালো নয়।’