আল-জাজিরার লোগো বসিয়ে জঙ্গি উত্থানের ভুয়া খবর

 আল-জাজিরার লোগো বসিয়ে জঙ্গি উত্থানের ভুয়া খবর

সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের ক্লাসরুমে লাঠি হাতে ঢুকে এক যুবকের অসংলগ্ন আচরণ করছেন -আল জাজিরার লোগো, ইংরেজি ভয়েস ও সাবটাইটেলসহ এমন একটি ভিডিওকে বাংলাদেশে জঙ্গি উত্থান নিয়ে আল-জাজিরার খবর হিসেবে দাবি করা হচ্ছে ফেসবুক-টুইটারে।  এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে , এখানে, এখানেএখানে

মূলত আল-জাজিরা এমন কোন খবর প্রকাশ করেনি। সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে এক যুবকের লাঠি হাতে ঢুকে পড়ে চিৎকার-চেঁচামেচি ও ফ্লোরে লাঠি দিয়ে আঘাত করার ভিডিওটি সত্য। তবে তাতে আল-জাজিরার লোগো বসিয়ে আর্টিফিশিয়াল ভয়েস ও ইংরেজি সাবটাইটেল দিয়ে আল-জাজিরার খবর হিসেবে ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

এতে ইংরেজিতে বলা হয়, “বাংলাদেশে হিজবুত তাহরির জঙ্গিরা সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের ক্লাসরুমে শিক্ষার্থীদের ভীতি প্রদর্শন করছে। ৫ আগস্ট ড. ইউনুস জঙ্গিদের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসে। এরপর সে সব জঙ্গিকে জেল থেকে মুক্তি দিয়ে দেয়। বাংলাদেশ খুবই অস্থিতিশীল একটি পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে যাচ্ছে।”

ভিডিওতে আলজাজিরার যে লোগোটি ব্যবহার করা হয়েছে তা গুগল থেকে কপি করে বসানোয় এটি কিছুটা অনুজ্জ্বল হয়ে পড়েছে এবং লোগোর নিচে ALJAZEERA লেখাটি কিছুটা ভেঙে গিয়েছে।

লাঠি হাতে যুবক সম্পর্কে যা জানা যাচ্ছে

গত ২৭ অক্টোবর রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের লেকচার গ্যালারিতে লাঠি হাতে এক যুবক ঢুকে পড়েছেন -এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। ভিডিওতে দেখা যায় যুবকটি চিৎকার-চেঁচামেচি করছেন, প্রলাপ বকছেন ও এক পর্যায়ে লাঠি দিয়ে সজোরে ফ্লোরে আঘাত করছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই এটাকে জঙ্গি হামলা বলে দাবি করেন। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানেএখানে

৩৩ সেকেন্ডের যে ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে তার শুরুতেই যুবকটিকে “তোর প্রেমেতে অন্ধ আমি, কী দোষ দিবি তাতে” -এই গানটি সজোরে গাইতে শোনা যায়। বাকী অংশে কী বলছিলেন তা স্পষ্ট নয়।

লাঠি হাতে মেডিকেল কলেজের ক্লাস রুমে ঢুকে পড়ার দু’দিন পর ২৯ অক্টোবর কিশোরগঞ্জ নিজ বাড়ি  থেকে আটক করা হয় যুবকটিকে। যুবকটির নাম জুবায়ের আলী বলে জানিয়েছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম। পরিবারের সদস্যরা সংবাদমাধ্যমের কাছে দাবি করেছেন ১০ বছর ধরে মানসিক সমস্যায় ভুগছেন ওই যুবক।

জুবায়েরের মেজ ভাই তোফায়েল প্রথম আলোকে বলেন, “প্রায় ১০ বছর ধরে ভাইকে সুস্থ করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করছেন তাঁরা। ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক দিয়ে উন্নতমানের চিকিৎসা করাচ্ছেন। এরপরও তাঁর ভাই সুস্থ হচ্ছেন না। তাঁরা একসময় ভেবেছিলেন, মানসিক হাসপাতালে রেখে আসবেন। তবে মানসিক চিকিৎসক আশ্বস্ত করেছিলেন যে জুবায়ের সুস্থ হয়ে উঠবেন, তাঁকে মানসিক হাসপাতালে পাঠানোর দরকার নেই।”

জুবায়েরের মা সুফিয়া আক্তার বলেন,  “নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় হঠাৎ একদিন তাঁর ছেলে ঘুম থেকে এক মেয়ের নাম বলে চিৎকার করে ওঠে। এর পর থেকেই সমস্যা। তবে ওই মেয়েকে তাঁরা কখনো দেখেননি। প্রায় ১০ বছর ধরে ছেলেকে নিয়ে ভুগছে পরিবার।”

প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, ২০০৪ সালে জুবায়েরের জন্ম। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়। জুবায়ের প্রথমে কিশোরগঞ্জ শহরের বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুলের ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করেছেন। এরপর শহরের আইডিয়াল স্কুল থেকে এসএসসি ও ওয়ালী নেওয়াজ খান কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে এখন গুরুদয়াল সরকারি কলেজের ডিগ্রি প্রথম বর্ষে পড়ছেন। নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় তাঁর মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। চিকিৎসায় সুস্থ হলেও মাঝেমধ্যেই সমস্যা দেখা দিত। এ জন্য কলেজে ভর্তি হলেও ক্লাস করতে পারেননি। শুধু পরীক্ষা দিয়েছেন।