বাংলা ট্রিবিউনের খবরে অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্যের একপাক্ষিক উপস্থাপন

 বাংলা ট্রিবিউনের খবরে অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্যের একপাক্ষিক উপস্থাপন

সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল চেয়ে সুজন’র (সুশাসনের জন্য নাগরিক) সম্পাদক ড. বদিউজ্জামান মজুমদারের করা রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালতের জারি করা রুলের  পঞ্চম দিনের শুনানি ছিলো বুধবার (১৩ নভেম্বর)। এদিন সংশোধনীটি বাতিল চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।

সংশোধনীটি বাতিলের পক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্যকে উদ্ধৃত করে সংবাদ পরিবেশন করেছে বিভিন্ন গণমাধ্যম। অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউন তাদের এ সংক্রান্ত খবরের শিরোনাম দিয়েছে- “বঙ্গবন্ধু জাতির অবিসংবাদিত নেতা: অ্যাটর্নি জেনারেল।”

বাংলা ট্রিবিউন তাদের খবরের শিরোনামটি এমনভাবে দিয়েছে যেন আদালতে দেয়া অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্যের এটিই ছিলো প্রধান দিক। খবরের ভেতরের অংশে পোর্টালটি অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্যের যে অংশ উল্লেখ করেছে তাতেও এর ব্যাতিক্রম কিছু প্রতীয়মান হয় না।

খবরিটির শুরুতেই পোর্টালটি লিখেছে, “অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান হাইকোর্টকে বলেছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অবিসংবাদিত জাতীয় নেতা, এটা অস্বীকারের সুযোগ নেই। কিন্তু তাকে একটি দল দলীয়করণের চেষ্টা করেছিল।”

প্রতিবেদনের মাঝে আবারও অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্ধৃত করে লিখেছে, “শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল আরও বলেন, সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদে গণভোটের বিধান ছিল। পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের এই বিধান তুলে দেওয়া হয়েছিল, আমরা গণভোটের এই বিধানটি বহাল চাই। যারা নিশি রাতে ভোট ডাকাতির মাধ্যমে এমপি হয়েছিলেন, তাদের ভোটে এই বিধান বাতিল হয়।”

কিন্তু অন্যান্য গণমাধ্যম খবরটি যেভাবে পরিবেশন করেছে তাতে প্রতীয়মান হয় শেখ মুজিবুর রহমানকে অবিসংবাদিত নেতা বলাটা অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্যের প্রধান দিক ছিলো না। এমনকি “অবিসংবাদিত নেতা” শব্দবন্ধটিই মূলধারার কোন গণমাধ্যমের খবরে খুঁজে পাওয়া যায় না।

যেমন, একাত্তর টিভি এ সংক্রান্ত খবরের শিরোনাম দিয়েছে- ”শেখ মুজিবকে জাতির পিতার স্বীকৃতি মূল সংবিধানের পরিপন্থি: অ্যাটর্নি জেনারেল।”

প্রতিবেদনের শুরুতে অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্ধৃত করে চ্যানেলটি লিখেছে- “শেখ মুজিবের অবদানকে কেউ অস্বীকার করেনা, কিন্তু তাকে জাতির পিতা বলে তা সংবিধানে স্বীকৃতি দেওয়া মূল সংবিধানের পরিপন্থি বলে হাইকোর্টকে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল আসাদুজ্জামান।”

এখন টিভি তাদের খবরের শিরোনাম দিয়েছে– “শেখ মুজিবেকে জাতির পিতা বলা সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক: অ্যাটর্নি জেনারেল।”

খবরের ভিতরে উদ্ধৃত করে লিখেছে- ‘পঞ্চদশ সংশোধনীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করা সংবিধানের মূল কাঠামোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক। একই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধে শেখ মুজিবের অবদান থাকলেও তাকে জাতির জনক স্বীকৃতি দেয়া অসাংবিধানিক। ৭ই মার্চের ভাষণ, মুজিব নগর সরকার সংবিধানের অংশ হওয়ার যোগ্য নয়।’

জনকন্ঠ খবরের শিরোনাম দিয়েছে– “শেখ মুজিবকে জাতির পিতা বলা মূল সংবিধানের কনসেপ্টের পরিপন্থী: অ্যাটর্নি জেনারেল।”

খবরের ভিতর অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্ধৃত করেছে এভাবে- “শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানকে কেউ অস্বীকার করতে পারে না, কিন্তু তাঁকে জাতির পিতা হিসেবে সংবিধানে স্বীকৃতি দেওয়া মূল সংবিধানের প্রতি অসংগতিপূর্ণ।”

উপরোল্লিখিত গণমাধ্যমগুলোর খবরে ‘শেখ মুজিবকে জাতির পিতা বলা সংবিধান পরিপন্থী’ বলে অ্যাটর্নি জেনারেল যে বক্তব্য দিয়েছেন সেটি বাংলা ট্রিবিউনের খবরে সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। যেটি তার বক্তব্যের প্রেক্ষাপটের ব্যাপারে অস্পষ্টতা তৈরি করে।

মূলত ২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনী পাস হয়। এই সংশোধনীর মাধ্যমে শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির জনক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। যেটি বাতিল চেয়ে বুধবার আদালতের সামনে রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তি উপস্থান করেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান।

আদালত যদি সংশোধনীটিকে অবৈধ ঘোষণা করে তাহলে শেখ মুজিবুর রহমান সাংবিধানিকভাবে আর জাতির পিতা থাকবেন না।

ফলে এটি প্রতীয়মান হয় যে অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্যের প্রধান দিক ছিলো ‘শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পিতা বলা অসাংবিধানিক’ বলে তিনি যে মন্তব্য করেছেন সেটি। এবং প্রসঙ্গক্রমে তিনি শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানের কথা উল্লেখ করেছেন।

অর্থাৎ বাংলা ট্রিবিউন প্রাসঙ্গিক কথাকেই একপাক্ষিকভাবে তার বক্তব্যের প্রধান দিক হিসেবে উপস্থাপন করেছে।