বাংলাদেশে আলুর দাম কেজি প্রতি ৪০০ টাকা হয়ে গেছে বলে একটি প্রচারণা চালানো হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে। মূলত নবান্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে বগুড়ায় লাল রংয়ের নতুন পাকড়ি আলু কেজি প্রতি ৪০০ টাকা বিক্রি হয়েছে। গণমাধ্যমের খবর ও সরেজমিনে বাজার পরিদর্শনে জানা যাচ্ছে, ঢাকাসহ সারাদেশে পুরাতন আলুর খুচরা মূল্য ৬০-৭০ টাকা, কোথাও কোথাও সর্বোচ্চ ৮০ টাকা এবং নতুন আলুর দাম ৯০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১১০-১২০ টাকা উঠেছে।
তবে সারাদেশে আলুর দাম ৪০০ টাকা হওয়ার প্রচারণার সূত্রপাত ঘটেছে আলুর দাম নিয়ে পরিবেশন করা খবরের বিভ্রান্তিকর শিরোনাম থেকে। আলুর দাম কেজি প্রতি ৪০০ টাকা হয়ে যাওয়া নিয়ে চালানো কয়েকটি প্রোপাগান্ডা দেখুন এখানে- ১, ২, ৩, ৪।
যেভাবে ছড়ালো বিভ্রান্তি
কালবেলা পত্রিকার অনলাইন ১৭ নভেম্বর “আলুর কেজি ৪০০ টাকা” শিরোনাম দিয়ে একটি খবর প্রকাশ করে। একই দিন জনকন্ঠ পত্রিকার অনলাইন ডেস্ক “আকাশ ছুঁলো আলুর দাম, কেজি প্রতি ৪০০” শিরোনামে একটি খবর প্রকাশ করে। আরটিভি অনলাইন ১৯ নভেম্বর “আলুর কেজি ৪২০ টাকা!” শিরোনাম একটি খবর প্রকাশ করে। এই তিনটি খবরই মূলত বগুড়ায় নবান্ন উপলক্ষে নতুন আলুর দাম সংক্রান্ত। কিন্তু সংবাদমাধ্যমগুলো তাদের খবরের শিরোনামে ‘বগুড়া’ ও ‘নতুন আলু’ উল্লেখ না করায় বহু পাঠকই এটি সারাদেশের আলুর দাম মনে করে বিভ্রান্ত হয়েছেন। আর গুজববাজরা এটাকে মিথ্যা প্রচারণা চালানোর সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করেছেন।
বিভ্রান্তিকর শিরোনামে ভুল বুঝেছেন জানিয়ে ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নাট্য অভিনেতা দীপক কুমার গোস্বামী। তিনি লিখেন, “একাধিক নামী পোর্টালে খবর দেখলাম নতুন আলু ৪০০ টাকা কেজি। দেখেই মেজাজ চড়ে গেল, এরপর পোস্ট দিলাম। কমেন্টে অনেকেই জানালো এগুলো মিথ্যা খবর। আমি পোস্টটা ‘অনলি মি’ করে বাজারে গেলাম।”
“ঢাকার বাজারে ১২০ টাকায় স্ট্যান্ডার্ড সাইজের এবং ১১০ টাকায় একটু ছোট সাইজের নতুন আলু বিক্রি হচ্ছে। অথচ, কালবেলা, ট্রিবিউনের মতো পত্রিকা নতুন আলু ৪০০ টাকা শিরোনাম দিয়ে নিউজ করে বসলো। এই ধরনের মিথ্যা সংবাদ প্রচার করে একে তো নিজেদের ক্রেডিবিলিটি হারাচ্ছে, অন্যদিকে নিজেদের অবস্থান যে ওইসব কালোবাজারি, ফড়িয়া, লুটেরা, দুর্নীতিবাজদের পক্ষে সেটা স্পষ্ট করছে। দেশের মানুষ চাইলেও যেন জনজীবনে শান্তি ফিরে না আসে এরা প্রতিনিয়ত সেই চেষ্টায় লিপ্ত।”
আলুর দাম সংক্রান্ত খবরের শিরোনামে ‘বগুড়া’ ও ‘নতুন আলু’ উল্লেখ থাকলে পাঠক এভাবে বিভ্রান্ত হতো না। যেমন দৈনিক যুগান্তর পত্রিকা তাদের এ সংক্রান্ত খবরের শিরোনাম দিয়েছে “বগুড়ায় প্রতি কেজি আলু ৪০০ টাকা।” এ শিরোনাম থেকে স্পষ্ট হওয়া যাচ্ছে যে এটি সারাদেশের নয়, বরং বগুড়ায় আলুর দামের খবর।
নবান্নে আলুর দাম আগেও ৪০০ টাকা হয়েছিল
এবছরই যে নবান্নে নতুন আলুর দাম ৪০০ টাকা হয়েছে তা নয়। বরং পূর্ববর্তী বছরগুলোতেও নবান্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় নতুন আলুর দাম ৩০০-৪০০ টাকা হওয়ার খবর বেরিয়েছিল।
যেমন, ঢাকা ট্রিবিউনের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে ২০২১ সালে বগুড়ায় নবান্ন উপলক্ষে নতুন পাকড়ি আলু ৩০০-৪০০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। বাংলা ট্রিবিউনের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে দেশের শীর্ষ খাদ্য উৎপাদনকারী জেলা দিনাজপুরেও ২০২২ সালে নবান্ন উপলক্ষে আগাম জাতের আলু ৩০০-৪০০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল।
এসব প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে নবান্নের সময় আলু পরিপক্ক না হওয়ায় নতুন আলুর দুষ্প্রাপ্যতার কারণে আলুর দাম এত আকাশচুম্বি হয়ে যায়। প্রথা পালনের জন্য উচ্চ দামেও নতুন আলু কেনেন সনাতন ধর্মালম্বীরা।