টাকা ধার নিয়ে বিরোধে হিন্দু নারী খুন, সাম্প্রদায়িক রং দিয়ে প্রচার ভারতীয় মিডিয়ায়

 টাকা ধার নিয়ে বিরোধে হিন্দু নারী খুন, সাম্প্রদায়িক রং দিয়ে প্রচার ভারতীয় মিডিয়ায়

বাংলাদেশের খাগড়াছড়ি জেলায় চুমকি দাস নামে এক নারীকে মৌলবাদীরা ঘরে ঢুকে হত্যা করেছে বলে প্রচার করা হয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম ও বিজেপি সংশ্লিষ্ট এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডেলে। বলা হচ্ছে নিহত চুমকি দাসের ছেলে প্রান্ত দাস সনাতনী জাগরণ জোটের খাগড়াছড়ি জেলার সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। চিন্ময় কৃষ্ণের গ্রেপ্তারের পর প্রতিবাদে সরব হওয়ায় উগ্রবাদীরা তাকে হুমকি দিতে থাকে এবং তাকে না পেয়ে বাড়িতে ঢুকে তার মা চুমকি দাসকে হত্যা করে। এধরণের দাবি করে খবর প্রকাশ করেছে হিদুস্তান টাইমস, এবিপি আনন্দ, tv9bangla, রিপাবলিক ওয়ার্ল্ড, অপইন্ডিয়াসহ আরও কিছু সংবাদমাধ্যম। খবরগুলো দেখুন এখানে- , , , ,

“এটি বিচ্ছিন্ন ও চুরির ঘটনা। ঐ নারীর শরীরের স্বর্ণালংকার নিয়ে যেতে বাঁধা দেওয়ায় তাকে খুন করা হয়েছে। এ ঘটনাকে সাম্প্রদায়িক রূপ দেওয়ার অপচেষ্টা নিছক অপপ্রচার”

তবে অনুসন্ধানে জানা যাচ্ছে নিহতের ছেলে প্রান্ত দাসের সাথে টাকা ধার সংক্রান্ত বিরোধের জেরে চুমকি দাসকে হত্যা করে রাসেল নামে এক যুবক। রাসেল পেশায় একজন অটো রিকশাচালক। এ বিষয়ে বাংলা ট্রিবিউন তাদের এক প্রতিবেদনে জানায়, প্রতিবেশী সিএনজি অটোরিকশাচালক রাসেল চুমকির পুত্র প্রান্ত দাসের কাছ থেকে বেশ কিছুদিন আগে ৯০ হাজার টাকা ধার নিয়েছিল। কিন্তু টাকা ফেরত না দেওয়ায় প্রান্তের সঙ্গে রাসেলের বিরোধ সৃষ্টি হয়। হত্যার ঘটনার আগে রাসেল চুমকির সঙ্গে কথা বলতে তার বাসায় গিয়েছিল।

দৈনিক দেশ রূপান্তর পত্রিকা স্থানীয়দের বরাতে জানায়, চুমকি দাসের সাথে কথা বলতে গেলে বাসায় তাকে একা পেয়ে হত্যা করে স্বর্ণালংকার নিয়ে সিএনজিতে করে পালিয়ে যায়।

খুন নিয়ে খাগড়াছড়ি পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি অশোক মজুমদারে মন্তব্য উদ্ধৃত করে পত্রিকাটি। অশোক মজুমদার বলেন, “এটি বিচ্ছিন্ন ও চুরির ঘটনা। ঐ নারীর শরীরের স্বর্ণালংকার নিয়ে যেতে বাঁধা দেওয়ায় তাকে খুন করা হয়েছে। এ ঘটনাকে সাম্প্রদায়িক রূপ দেওয়ার অপচেষ্টা নিছক অপপ্রচার”

দৈনিক সমকাল এক প্রতিবেদনে জানায় অভিযুক্ত রাসেলকে গত শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) আটক করেছে পুলিশ। হত্যার পেছনে টাকা ধার সংক্রান্ত বিরোধকেই কারণ হিসেবে মনে করছে পুলিশ। পুলিশ জানায় হত্যাকারী চুমকি দাসের গলার হার ও কানের দুল চুরি করে নিয়ে যায়।

ভারতীয় পত্রিকা হিন্দুস্তান টাইমসের বাংলা ভার্সনের একটি প্রতিবেদনে খুনের জন্য টাকা ধার নিয়ে বিরোধকে খুনের জের হিসেবে উপস্থাপন করলেও পরবর্তীতে আরেক প্রতিবেদনে বিজেপে নেতাদের টুইটকে উদ্ধৃত করে এ ঘটনার সাথে চিন্ময় কৃষ্ণের গ্রেপ্তারে প্রতিবাদের ঘটনাকে যুক্ত করে।

বিজেপি যুব মোর্চার পশ্চিমবঙ্গ শাখার মুখপাত্র অচিন্ত্য মণ্ডল চুমকি রানির ঘরের ভিডিয়ো পোস্ট করে লেখেন, ‘খাগড়াছড়ি জেলায় সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের সমন্বয়ক প্রান্ত দাসকে না পেয়ে তার মা’কে হত্যা করেছে জিহাদিরা। চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে খাগড়াছড়িতে প্রতিবাদ মিছিলের পর থেকেই ফেসবুকে জিহাদিরা প্রান্ত দাসকে কয়েকবার হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিল।’

হিন্দু ভয়েস নামের একটি এক্স (টুইটার) হ্যান্ডেল থেকেও এ ঘটনাকে উগ্রবাদীদের আক্রমণ বলে উপস্থাপন করা হয়। এই এক্স হ্যান্ডেলটি থেকে অব্যাহতভাবে বিকৃত তথ্য প্রচার করতে দেখা গিয়েছে।