সম্প্রতি ফেসবুকে দুরবীন নিউজ নামের একটি পেজে “গাজীপুরে ছাত্রদল নেতার কাণ্ড! প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তরুণীকে পাইপ দিয়ে পেটালেন ছাত্রদল নেতা” শিরোনামের একটি ফটোকার্ড প্রচার করা হয়। সেখানে কালো বোরকা ও সাদা ওড়না পরিহিত এক তরুণীর ছবি ব্যবহার করা হলেও ঘটনার কোনো নির্ভরযোগ্য উৎস বা প্রমাণ উল্লেখ ছিল না।
একই দাবির ভিত্তিতে একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার মুখ্য সংগঠক হাসিবুল ইসলাম নিজের ফেসবুক আইডিতে একই দাবি শেয়ার করেন এবং কমেন্টে দুরবীন নিউজ–এর ফটোকার্ড ও ভাইরাল ভিডিওকে সোর্স হিসেবে উল্লেখ করেন। তবে যাচাইয়ে দেখা গেছে, এই দাবিটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটিতে ‘এখন বাংলা টিভি’ নামের একটি ফেসবুক পেজের লোগো দেখা যায়। ওই পেজে ২৩ জুলাই প্রকাশিত পোস্টে উল্লেখ করা হয় যে, ভিডিওটি বরিশালের উজিরপুর উপজেলার ধামুরা বাজারে ধারণ করা। ভিডিওতে দেখা যায় কয়েকজন যুবক একজন পুরুষকে পাইপ দিয়ে আঘাত করছে এবং পাশে দাঁড়ানো এক তরুণী আতঙ্কিত কণ্ঠে “আব্বা, আব্বা” বলে চিৎকার করছেন।
ভিডিওটির কয়েকটি কী–ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চ করে একই ভিডিও বিভিন্ন ফেসবুক পেজ ও এক্স (পূর্বে টুইটার) হ্যান্ডেলে পাওয়া যায়। একই সংস্করণের এমন একটি ভিডিওতে শোনা যায়, এক ব্যক্তি বলছে— “যারে ভালো লাগবে তারে কোপামু।” ভিডিওতে হামলাকারী একজনের সঙ্গে এই বক্তব্য দেওয়া ব্যক্তির চেহারার মিল পাওয়া যায়।
এই সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কী–ওয়ার্ড দিয়ে সার্চ করলে আজকের পত্রিকা–র অনলাইন সংস্করণে ২৪ জুলাই প্রকাশিত “যারে ভালো লাগবে তারে কোপামু’ বলা যুবক সাবেক ছাত্রদল নেতা” শিরোনামের একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সেখানে বলা হয়েছে, ধামুরা বাজারে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে সোহেল রানা নামের এক স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকে ছাত্রদল নেতার নেতৃত্বে পিটিয়ে জখম করা হয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা সোহেলের অভিযোগ অনুযায়ী স্থানীয় যুবকেরা তার কাছে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছিল; টাকা না দেওয়ায় হামলা চালানো হয়। অপরদিকে অভিযুক্ত পক্ষের দাবি, বিরোধীয় জমি নিয়ে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়েছিল সোহেলের দিক থেকেই। হামলার নেতৃত্ব দেন ধামুরা ডিগ্রি কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি সাব্বির ব্যাপারী। একই কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ মিরাজ হামলার পরে এক ভিডিওতে উল্লেখ করেন— “সোজা কথা, যারে ভালো লাগবে, তারে কোপামু।” ওই প্রতিবেদনের ছবি ও বর্ণনা ভাইরাল ভিডিওর সঙ্গে মিলে যায়।
ভাইরাল এই ভিডিওর প্রসঙ্গে অনেকেই একটি পুরোনো সংবাদ টেনে এনে আরও বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করেছেন। ২০২০ সালের ১৮ অক্টোবর তারিখে দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় “প্রেম প্রত্যাখ্যান করায় কলেজছাত্রীকে প্রকাশ্যে কোপাল ছাত্রলীগ নেতা” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে ভাইরাল হওয়া ভিডিওটির সঙ্গে সেই ঘটনার কোনো সম্পর্ক নেই। যাচাইয়ে দেখা গেছে, যুগান্তরের ওই পুরোনো খবরের স্ক্রিনশট এডিট করে তার সঙ্গে বর্তমানে ভাইরাল হওয়া ভিডিওর একটি দৃশ্য থাম্বনেইলের মতো করে জুড়ে দেয়া হয়েছে । এতে সাধারণ পাঠকের মনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে—যেন ভিডিওটিই ২০২০ সালের প্রেমঘটিত ঘটনার অংশ। বাস্তবে, ভাইরাল ভিডিওটি সম্পূর্ণ নতুন এবং বরিশালে জমি–সংক্রান্ত বিরোধের ঘটনায় ধারণ করা। এর সঙ্গে ২০২০ সালের প্রেম প্রত্যাখ্যানজনিত ঘটনার কোনো যোগসূত্র নেই।
অর্থাৎ, ভাইরাল ভিডিওটি প্রেম প্রত্যাখ্যানের ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। এটি জমি–সংক্রান্ত বিরোধের জেরে সংঘর্ষের সময় ধারণ করা হয়েছিল। ফলে ফেসবুকে প্রচারিত “প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তরুণীকে পাইপ দিয়ে পেটানো” সংক্রান্ত দাবি সম্পূর্ণ ভুয়া।
